NEWS ROOM ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ , ৩:৪৫:২০ 139
নিজেস্ব প্রতিবেদকঃ ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধ
যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধি এক অংকের ঘরে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি। অর্থমূল্য বিবেচনায় গত অর্থবছরেও মোট রফতানির প্রায় ৩৮ শতাংশই গেছে দেশ দুটিতে। চলতি অর্থবছরে গন্তব্যগুলোয় বাংলাদেশী পোশাকের রফতানি প্রবৃদ্ধি এক অংকের ঘরে নেমে এসেছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে বিশ্ববাজারে ৪২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থমূল্যের পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। যার ২১ দশমিক ১৫ শতাংশ রফতানি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ১৬ দশমিক ৮২ শতাংশ হয়েছিল জার্মানিতে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সম্প্রতি প্রকাশিত মাসিক পরিসংখ্যান প্রতিবেদন থেকে দেশভিত্তিক পোশাক রফতানির তথ্য সংকলন করেছে বিজিএমইএ। গতকাল সংগঠনটির পক্ষ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রধান দুই বাজারের রফতানি প্রবৃদ্ধি এক অংকের ঘরে রয়েছে।
প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি ৪২৭ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। প্রবৃদ্ধি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ১১ শতাংশ। একই সময় জার্মানিতে পোশাক রফতানি হয়েছে ৩৫৪ কোটি ২১ লাখ ডলারের। গত অর্থবছরের চেয়ে রফতানি বেড়েছে ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
বিজিএমইএ পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, পরিসংখ্যানে প্রধান দেশগুলোয় তৈরি পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি দেখা গেলেও তা তুলনামূলক কম। এটি ইঙ্গিত দেয় যে আগামী মাসে প্রবৃদ্ধি আরো হ্রাস পেতে পারে।
ইপিবির পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) বাংলাদেশের পোশাক রফতানি ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ১৫০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময় যা ছিল ৯৮৭ কোটি ডলার। ইইউর প্রধান বাজারগুলোর স্পেন ও ফ্রান্সে রফতানি যথাক্রমে ১৭ দশমিক ৬২ এবং ৩৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ বেড়ে ১৭০ কোটি ডলার এবং ১৪১ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। পোল্যান্ডে রফতানি কমেছে ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। যুক্তরাজ্য ও কানাডায় রফতানি যথাক্রমে ১১ দশমিক ৮৯ এবং ২৮ দশমিক ৪২ শতাংশ বেড়ে প্রায় ২৩৯ কোটি এবং ৭৭ কোটি ৪১ লাখ ডলারে পৌঁছেছে।
প্রচলিত বাজার ছাড়াও অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩২ দশমিক ১৯ শতাংশ বেড়ে ৪০৪ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে জাপানে ৪২ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়ে ৭৫ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের বেশি রফতানি হয়েছে। ভারতে রফতানি ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৫৪ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের এক্সটারনাল ইকোনমিকস শাখা থেকে প্রকাশিত হয় তৈরি পোশাকের প্রান্তিক পর্যালোচনা শীর্ষক প্রতিবেদন। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের অর্থনীতির অন্যতম অবলম্বন তৈরি পোশাক এখন মন্থর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রফতানি আগের অর্থবছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের চেয়ে কমেছে ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। বিশ্বব্যাপী বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। বেড়েছে জীবনযাপনের ব্যয়। প্রধান রফতানি গন্তব্যগুলোর জনগোষ্ঠী বাধ্য হচ্ছে পোশাক কেনা বাবদ ব্যয় কমিয়ে আনতে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছিল, পোশাকের প্রধান রফতানি গন্তব্য দেশগুলোয় বর্তমানে অর্থনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। তাই জাপান, ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের মতো প্রতিশ্রুতিশীল এশীয় অর্থনীতির দেশই হওয়া উচিত বাংলাদেশের গন্তব্য নির্ধারণের নতুন লক্ষ্য। পাশাপাশি কৃত্রিম তন্তু বা ম্যান মেড ফাইবার এবং কারিগরি বস্ত্রের বৈশ্বিক বাজারের বৈচিত্র্যকে অগ্রাধিকার দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংস্থাটির মতে, তুলাজাত তৈরি পোশাকের চেয়ে কৃত্রিম তন্তুজাত পোশাক রফতানিতে লাভবান হওয়ার সুযোগ বেশি। দেশের তৈরি পোশাক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন গন্তব্যগুলোয় এরই মধ্যে রফতানির গতি ভালো। বিশেষ করে বর্তমান খারাপ সময়েও ভারতে রফতানি পরিস্থিতি ভালো এবং বাড়ছে। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় রফতানি বাড়াতে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। দেশটিতে এখন রফতানি বাড়ছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে পোশাক রফতানি বৃদ্ধিতেও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় ১০০ ক্রেতা প্রতিনিধি। তারাও বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি বৃদ্ধিতে আগ্রহী। বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলোর মাধ্যমেও রফতানি বাজার প্রসারিত করার উদ্যোগ চলমান।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা নতুন দেশগুলোর দিকে মনোযোগী হচ্ছি। কারণ নিজেরাই বুঝতে পারছি, ইউরোপে মন্দা ও মূল্যস্ফীতির কারণে সামনের দিনগুলোয় রফতানি শ্লথ হবে। যুক্তরাষ্ট্রেও শ্লথ হতে পারে। যদিও দেশটিতে এখন পর্যন্ত রফতানি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত। সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য নতুন বাজারগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। সরকারের সমর্থন বাড়ানো প্রয়োজন।